Header Ads

Header ADS

কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড



পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত ও পর্যটকদের আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় স্থানের নাম কক্সবাজার। যা কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। প্রায় ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত গভীর সমুদ্র বিশিষ্ট এই কক্সবাজার  বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত। এর আকর্ষণ ও অপরূপ সৌন্দর্যের ফলে সারা বছর জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের ভিড় অনবরত লেগেই থাকে। সাড়ি সাড়ি ঝাউবন, বালির নরম বিছানা, বিশাল সমুদ্র ও বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি এবং শো শো গর্জনের মন কাড়া সমুদ্রসৈকত  প্রতিটি দর্শনার্থীদের কৌতূহল ও প্রধান আকর্ষণবিন্দু।

অবস্থান

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এর পূর্ব উপকূলে দর্শনার্থীদের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এই কক্সবাজার জেলা শহরের অবস্থান। যার আয়তন প্রায় ১৩৯১.৮৫ বর্গ কিলোমিটার। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কক্সবাজারকে মহকুমায় উন্নীত করেন যা পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ এটি পরিপূর্ণ জেলায় রুপান্তর হয়।

কক্সবাজার যাওয়ার সঠিক সময়

অধিকাংশ ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার ভ্রমনের নির্বাচিত সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়। কেননা এসময় আকাশে যেমন বৃষ্টি আচ্ছন্ন থাকে না, তেমনি গরমও কম থাকে। ফলে নাতিশীতোষ্ণ এই আবহাওয়ায় প্রকৃতি ও বিশাল সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে পর্যটকরা বিলীন হয়ে যায়।

তবে প্রকৃতির বিচিত্র রূপ প্রদর্শনের জন্য আপনি যেকোনো সময়েই কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেন। যেহেতু শীতের সময় পিক সিজনে পর্যটকের প্রকোপ অনেক বেশী থাকে, তাই শীতকাল ব্যতীত অন্যান্য দিনগুলোতে অফ সিজনে হোটেলগুলোয় আপনি পাবেন ৩০% থেকে ৬০% পর্যন্ত ছাড়। এবং পিক সিজনে গেলে অবশ্যই আপনার হোটেলরুম বুকিং দিয়ে যাবেন। নতুবা রুম না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী থাকে!  

থাকার স্থান

সারাদিন হৈ-হুল্লোড় আর হাসি-আনন্দে সময় কাটিয়ে উঠার পর কার না মন চায় একটু বিশ্রাম নিতে? তাই পর্যটকদের বিশ্রামের সুবিধার্থে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে মানসম্মত বিভিন্ন মানের ও ক্যাটাগরির থাকার হোটেল।

সাধারণত দাম ও মান অনুযায়ী এখানে থাকার রুমগুলো হোটেল ও রিসোর্ট ভাগে বিভক্ত। সারাবছর পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকার ফলে এখানে সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন মানের রিসোর্ট, হোটেল ও বোডিং হাইজ।

বিলাসবহুল হোটেল এবং রিসোর্ট

পর্যটকদের সকল আধুনিক সুবিধাসহ এখানে আছে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টসমূহ। সাধারণত মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হ্যারিটেজ ইত্যাদি বহু বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্ট পাবেন যার ভাড়া প্রতিদিন আনুমানিক ৬০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অফ সিজনে ভাড়া ৩০% থেকে ৬০% কমে পাবেন।

মাঝারি মানের হোটেল

পরিবারসহ নিরিবিলি ও নিরাপদে থাকার জন্য মাঝারি মানের হোটেলগুলোর উপর পর্যটকরা বেশির ভাগ নির্ভরশীল। মাঝারি মানের হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, মারমেইড রিসোর্ট, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, হোটেল সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি। কম খরচে মানসম্মত এই রিসোর্টগুলোর ভাড়া পরবে প্রতিদিন ৩০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে। 

নিম্নমানের হোটেল

নিম্নমানের হোটেলগুলো আপনি মাত্র ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। এদের মধ্যে ঊর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, নীলিমা রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্টগুলো অন্যতম।

তবে হোটেল ও রিসোর্টের পাশাপাশি এখানে কিছু ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট গড়ে উঠেছে যা বড় পরিবারসহ ভ্রমনের জন্য থাকার উপযোগী। প্রতিটি ফ্ল্যাটে এসি/নন এসি সহ ২/৩/৪ বেডরুম, রান্নাঘর ও বাথরুমসহ ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া পরবে পার ডে ২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা।  

বিচ ভিউ / সী ভিউ হোটেল

কক্সবাজার ভ্রমনের প্রধান ও অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বিশাল এই সমুদ্র সৈকত নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করা। আর এজন্যই অনেকে তাদের থাকার হোটেল বা রিসোর্টটি বিচের খুব কাছাকাছি নিয়ে থাকে যেন তাদের রুম থেকেই প্রকৃতির সাথে সমুদের উত্তাল-পাতাল ঢেউ দেখতে পায়। তবে বিচ ভিউ এই রুম বা হোটেলগুলোর ভাড়া তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশী হয়ে থাকে। তাই কিছুটা ছাড় পাবার জন্য পিক সিজনের চেয়ে অফ সিজনে যাওয়াটাই সর্বোপরি উত্তম।

কক্সবাজারে যা কিছু উপভোগ করবেন

প্যারাসেইলিং

বর্তমানে কক্সবাজার ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের কাছে প্যারাসেইলিং (Parasailing) এর আকর্ষণ ও কৌতূহল দিন দিন বেড়েই চলছে। এই অ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে পর্যটকরা আকাশ থেকে খুব সহজে দেখতে পারছে কক্সবাজারের সমুদ্র ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

প্যারাসেইলিং শুধু কক্সবাজারের দরিয়ানগর ও হিমছড়িতে দেখা যায়। দরিয়ানগরের “স্যাটেলাইট ভিশন” এবং হিমছড়িতে “ফানফেস্ট” নামক একই মালিকানাধীন দ্বারা দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন পর্যটকদের সুযোগ করে দিয়েছে এই অ্যাডভেঞ্চারে ওঠার। তবে ১২ বছরের নীচে, দুর্বলচিত্তের মানুষ ও হার্টের রুগীদের ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর বাচ্চারা দিকনির্দেশনার জন্য উঠতে পারবে একজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে।

অ্যাডভেঞ্চারটি তিনটি প্যাকেজ দ্বারা তৈরি।

জনপ্রতি ১৫০০ টাকার নরমাল রাইডে আছে শুধুই আকাশে ওড়ার ও দেখার সুযোগ। জনপ্রতি ২০০০ টাকার সুপার রাইডে আছে উড়তে উড়তে একবার সাগরের মধ্যে পা ভিজিয়ে পুনরায় উপরে ওড়ার সুযোগ। আর সর্বশেষ জনপ্রতি ২৫০০ টাকার সুপার-ডুপার রাইডে আছে উড়ার সাথে সমুদ্রে দুইবার পা ভেজানোর সুযোগ।  

বিচ ফটোগ্রাফি

প্রত্যক্ষবাসী দর্শনার্থীদের কক্সবাজার ভ্রমণ স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে সেখানে আছে প্রায় দুই’শতরও বেশী বিচ ফটোগ্রাফার। যাদের মাধ্যমে আপনি আপনার সুন্দর মুহূর্তগুলোকে আটকে রাখতে পারবেন ছবির পাতায়!

লাল পোশাক পরিবাহিত প্রতিটি ফটোগ্রাফারদের আছে নিজ আইডি কার্ড যা দেখে আপনি তাদের সনাক্ত করতে পারবেন খুব সহজেই। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পর্যটকদের ছবি প্রিন্ট করে নেগেটিভ সহকারে তারা পর্যটকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পারদর্শিতা বজায় রাখে।

সরকারি রেট অনুযায়ী 4R সাইজের প্রতিটি ছবি ৩০ টাকা যার তথ্য সম্পর্কিত সাইনবোর্ড আপনি মেইন বিচে দেখতে পাবেন।    

স্পিডবোট

বিচে পর্যটকদের জন্য আছে স্পিডবোটের সুবিধা যার চলাচল মেইন বিচ থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত। এবং ভাড়া জনপ্রতি অনুযায়ী এক রাউন্ড ১০০ টাকা করে নিয়ে থাকে। এছাড়া জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা করে খোলা স্পিডবোটের সাহায্যে চলে লাইফ বোটে আপনি চড়তে পারেন।

বিচ বাইক

 কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য আছে তিন চাকার বিচ বাইকে চড়ার সুবিধা যা প্রায় ১ কিলোমিটার দূরত্বে বাইক রাউন্ডে জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হয়। 

রেস্টুরেন্ট বা খাবার ব্যবস্থা

কক্সবাজারে থাকার আবাসিক হোটেলগুলোর আনাচে-কানাচে খাবার রেস্টুরেন্টগুলো পর্যটকদের চোখে পড়ার মতো। এখানে আপনি পাবেন সব ধরনের ও বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট। পর্যটকদের বাজেট অনুসারে আছে খাবারের বৈচিত্র্যতা। তবে প্রতিটা পর্যটকদের খাবার ম্যেনুর মধ্যে প্রধান ও প্রথম আকর্ষণ হচ্ছে সমুদ্রের বিভিন্ন মাছের তৈরি খাবার এবং হরেক রকম মাছের তৈরি ভর্তা।

পর্যটকদের জন্য এখানে মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রোদেলা, ঝাউবন, নিরিবিলি, পৌষি ধানসিঁড়ি ইত্যাদি। সিজন অনুযায়ী খাবারের দামের কিছুটা কম-বেশি পার্থক্য হতে পারে।

খাবারের ম্যেনুখাবারের দাম
ভাত২০-৪০ টাকা
মিক্সিড ভর্তা (৮-১০ আইটেম) ৭৫, ১৫০ এবং ৩০০ টাকা
লইট্যা ফ্রাই১০০-১২০ টাকা
কোরাল বা ভেটকি মাছ১৫০ টাকা
গরু গোস্ত১৫০-২০০ টাকা
রূপচাঁদা মাছ৩০০-৪০০ টাকা
ডাল৩০-৬০ টাকা

এছাড়া লাবনী পয়েন্ট গেলে পর্যটকদের চোখে পরবে ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে সুস্বাদু হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি। সাথে ছোট-বড় সকলের পছন্দের তালিকার মধ্যে কেএফসি তো আছেই!                                                              

সমুদ্রে নামার আগে কিছু প্রয়োজনীয় ভ্রমণ টিপস

সমুদ্র উপকূলে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় সম্পর্কে জেনে নিবেন। কেননা জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে নামা যাবে তবে ভাটার সময় পানিতে নামলে যে কেউ ভাটার গতিবেগের সাথে সমুদ্রের গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রতিটা পর্যটকের জন্য প্রযোজ্য।

জোয়ার ও ভাটা সম্পর্কে বিচের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াছির লাইফ গার্ডের অনেকগুলো সাইনবোর্ড ও পতাকা লাগানো আছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে জোয়ারের সময় বিচে সবুজ পতাকা উড়ানো হয় আর ভাটার সময় লাল পতাকার মাধ্যমে সকলকে আগাম বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • কলাতলী ও লাবনী সৈকত
  • হিমছড়ি
  • ইনানী সৈকত
  • নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ 
  • ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক
  • সেন্টমার্টিন ও ছেড়াদ্বীপ
  • মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপ
  • বৌদ্ধ মনাস্ট্রি বা মঠ আশ্রম
  • বৌদ্ধ ধর্মের অন্যান্য চর্চা কেন্দ্র রামু
  • রামু রাবার গার্ডেন
  • মেরিন ড্রাইভ
  • রেডিয়েন্ট ফিশ একুরিয়াম
  • শাহপরীর দ্বীপ
  • ইনানি রয়েল রিসোর্ট
  • মাথিনের কূপ
  • রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা
  • মারমেইড ইকোরিসোর্ট
  • শামলাপুর সমুদ্র সৈকত
  • কুতুবদিয়া দ্বীপ
  • আদিনাথ মন্দির, মহেশখালী

যাওয়ার উপায়

শুধু ঢাকা না, বর্তমানে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়ক,  ট্রেন এবং আকাশপথে খুব সহজে সকলেই যেতে পারবে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতে।

সড়ক পথে কক্সবাজার

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারগামি সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে আপনি চলে যেতে পারেন স্বপ্নের রাজ্য কক্সবাজারে।

বিমানে কক্সবাজার

ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে খুব সহজে ও কম সময়ে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা সহ বেশকিছু বিমান যোগে আকাশপথে সরাসরি আপনি পৌঁছে যেতে পারেন কক্সবাজার।

এছাড়া চাইলে বিমানে করে সরাসরি কক্সবাজার না এসে, চট্টগ্রাম নেমে নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস যোগে সড়ক পথে আপনি কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে পারেন।  

ট্রেন জার্নিতে কক্সবাজার

ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা- নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলি ইত্যাদি ট্রেনে করে আপনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে পারেন। তারপর চট্টগ্রাম নেমে নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস যোগে সড়ক পথে এসি/নন এসি ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে আপনি কক্সবাজার যেতে পারেন।  



No comments

Powered by Blogger.